শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

গতকাল রাতের ঘটনা, পান্থপথ থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে সিএনজিতে উঠলাম।

Image may contain: 1 personগতকাল রাতের ঘটনা, পান্থপথ থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে সিএনজিতে উঠলাম। সিএনজিতে উঠেই দেখলাম উপরে ফ্যান ঘুরতেছে, ভাবলাম যাক ভালোই হল, আরামে যাওয়া যাবে! কিন্ত আস্তে আস্তে আরও অনেক কিছুই আবিষ্কার করতে থাকলাম, যেমন টিউবলাইট, ছাতা, কাগজ-কলম ইত্যাদি।
সিএনজি চালককে কারন জিজ্ঞেস করতেই এক এক করে সবকিছুই বলতে লাগল।
"মামা, ফ্যানটা আসলে ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধ মানুষ এবং অসুস্থ রোগীর জন্য লাগিয়েছি, জ্যাম আর গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যায় কিছুদির পর আরও গরম পড়বে তখন বেশী প্রয়োজন হবে। আর বৃষ্টির মৌসুমতো তাই ছাতা রাখছি।"
এবার একটু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম তাহলে এই খাতা-কলম কেনো, বলল অনেক সময় যাত্রীরা মোবাইলে কথা বলার সময় কারও মোবাইল নাম্বার লেখার প্রয়োজন হয়, তখন কিছুই পাওয়া যায় না, তাই রাখছি।
উনি আরও বলল, "মোবাইল, ল্যাপটপ চার্জ দেয়ার ব্যবস্থাও রাখছি।" সত্যি তো, তাকিয়ে দেখি স্মার্ট ডিভাইজগুলো চার্জ দেয়ার একটা সিস্টেম করা আছে তবে ল্যাপটপ চার্জ দেয়ার সিস্টেম ছিল না।
সিএনজির ছাদে লাগানো sun-protected কভার দেখিয়ে বলল, এটা লাগিয়েছি যেন যাত্রীদের রোদের তাপ বেশী না লাগে।
আমি মজা করার জন্য বললাম, এত কিছু করলেন কিন্ত মিউজিক সিষ্টেম নেই কেন? বলল, "গান শোনার দরকার নাই তবে খবর দেখা বা শোনার ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল হত, কি বলেন!" আমি তার চিন্তাশক্তি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডটা দেখিয়ে বলল, এটা নীলক্ষেত থেকে করেছি, এক'শ টাকা লাগছে। এটাতে আমার নিজের এবং বাসার অন্য সবার মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে, যদি কখনও দুর্ঘটনায় পড়ি তাহলে যেন আমার বাসার মানুষ খবরটা পায়, এজন্য এটা করিয়েছি।
আরও জানালো যে, কোন যাত্রী চাইলেই তাকে বিকাশ, ইউক্যাশ কিংবা মোবাইল রিচার্জের মাধ্যমে সিএনজি বিল পরিশোধ করতে পারবে। আবার কারও কাছে টাকা না থাকলে পরে টাকা দেবার কথা বলে মোবাইল নাম্বার রেখে দেন।
"কেউ যদি টাকা মেরে দেয়?" প্রশ্নটা শুনে বলল, "দুবার এরকম হয়েছিল, পরে ফোন করে বলেছিলাম, ভাই টাকা না দিলে আমার কোন ক্ষতি নাই তবে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। উত্তরে তারা জিজ্ঞেস করেছিল কেন? আমি বলেছিলাম, আপনি টাকা না দিলে আর কাউকে টাকা না দিয়ে এক পাও এগুতে দিবো না, দেশের অনেক মানুষ আপনার জন্য এই সুবিধা আর পাবে না। এটা বলার পর তারা টাকা দিয়ে দিছে (হাসি)। আর খাইলে কতইবা খাইত একশ, দুইশ বা পাঁচশ।"
উনার ভবিষ্যত পরিকল্পনাও বলল, টাইম দেখার জন্য একটা ঘড়ি আর দিক নির্দেশনার জন্য একটা কম্পাস লাগাবেন শীঘ্রই। সিএনজিটা অন্য মালিকের হলেও পুরো সেটআপ উনি নিজের বুদ্ধি এবং অর্থ খরচ করে করেছেন শুধুমাত্র দেশের মানুষকে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে।
উনার এই উদ্যোগের প্রশংসা না করে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। সত্যিই একজন সিএনজি চালক দেখিয়ে দিচ্ছে, ইচ্ছা থাকলে যেকোন ভাবেই, যেকোন স্থান থেকেই দেশের আর দেশের মানুষের সেবা করা যায়।
এই লেখা টি Mahfuzar Rahman এর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া।
এই ধরনের উদ্যোগকে অবশ্যই উৎসাহিত করা উচিত। তাই যত খুশি শেয়ার করে সবাইকে অনুপ্রেরনা দিন।

Image may contain: outdoor
Image may contain: 1 person
Share:

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *