বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

গাজীপুরে মেধাবীদের আকর্ষণ রানী বিলাসমনি উচ্চ বিদ্যালয়


গাজীপুরে মেধাবীদের আকর্ষণ রানী বিলাসমনি উচ্চ বিদ্যালয়
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বর্ণিল দীপ্তিতে ভাস্বর এককালের ভাওয়াল পরগনাই বর্তমানে গাজীপুর জেলা। তত্কালীন ভাওয়াল পরগনার কেন্দ্রবিন্দু জয়দেবপুর এখন পরিচিত গাজীপুর জেলা সদর হিসেবে। আর এ জেলা সদর ২০১৩ সালে গাজীপুর মহানগরীতে উন্নীত হয়েছে। আর ভাওয়ালের মহিমা ললাটে ধারণ করে গাজীপুর জেলা সদরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাণী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়।

তত্কালীন ভাওয়াল রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর সহধর্মিণী বিদ্যানুরাগী রাণী বিলাসমণি দেবী নিজ উদ্যোগে ১৯০৫ সালের ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।

রাণী বিলাসমণির বাবার বাড়ি ছিল বরিশালের বানারীপাড়ায়। ১৯০১ সালে ভাওয়াল রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়ের মৃত্যুর পর রাণী হিসেবে তিনি জমিদারীর কর্তৃত্ব নিজ হাতে তুলে নেন। এ অবস্থায় তিনি একক প্রচেষ্টায় ১৯০৫ সালে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৮৮জন এবং শিক্ষক ছিলেন ১২জন। বিদ্যালয়ে তখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু বিনোদ বিহারী বসু। তিনি ১৯০৫ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ১৯০৬ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ও রাণী বিলাসমণি দেবীর ছেলে কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীকে প্রধান করে বিদ্যালয়ের একটি পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় যে দুটি ভবন নির্মাণ করে পাঠদান শুরু হয় বর্তমানে সে ভবন দুটি ধ্বংস না হলেও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে নির্মিত আরেকটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের সামনে ছিল বিশাল আকৃতির একটি মাঠ। সরকারিকরণের পর এ মাঠের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে তিনতলা বিশিষ্ট নতুন দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে দুই শিফট চালু রয়েছে। দুই শিফটে ছাত্র সংখ্যা ১৮৭৬জন। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক একজন থাকলেও দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সহকারী শিক্ষক রয়েছেন মোট ৪৯ জন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক মাসুদা খানম ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন।

প্রথম থেকেই বিদ্যালয়টি ছাত্ররা ভালো ফলাফল অর্জন করে আসছে। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ২০১১ ও ২০১৪ সালে বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ২০১৪ সালে বিদ্যালয় থেকে এ প্লাস পেয়েছে ২৩৫ জন।

বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করে পরবর্তী সময়ে যারা স্বনামধন্য হয়ে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন তাদের সংখ্যাও অনেক। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন আইসিএস বেনী মাধব, ব্যারিস্টার সুবোধ দত্ত, রায় বাহাদুর সারদাচারণ ঘোষ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গিরিজা শংকর, ড. সুধেন্দু, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস আব্দুল হাসিব, অবসরপ্রাপ্ত নৌ-বাহিনীর প্রধান রিয়ার এডমিরাল আমীর আহমদ মুস্তফা, প্রাক্তন আইন সচিব মো. আসাদুজ্জামান, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী, প্রাক্তন মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বরখাস্ত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মাহমুদ হাসান, শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ক্ষেত্র মোহন দাস, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ভাওয়াল রত্ন, হূদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়নাল আবেদীন খান প্রমুখ। গত ২০০৫ সালে বিদ্যালয়টি শতবর্ষ পার করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা খানম জানান, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের অভাব রয়েছে। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত মিলনায়তনও নেই। বিদ্যালয়ের নিজস্ব খেলার মাঠ নেই। দুটি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। দুইজনের জায়গায় একজন অফিস সহকারী এবং পাঁচজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যেও রয়েছেন মাত্র তিনজন।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও প্রাক্তন ছাত্র মো. নুরুল ইসলাম ভাওয়াল রত্ন জানান, বিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্য কালের বিবর্তনে কিছুটা ম্লান হয়েছে। তবে এখনো বিদ্যালয়টিতে সেরা ছাত্ররা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।
সুত্র- দৈনিক ইত্তেফাক
Share:

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

ব্লগ সংরক্ষাণাগার