বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি


-এই যে মিষ্টার শুনুন?(মেয়েটি)
-জ্বি আমাকে বলছেন।(আমি)
-আশেপাশে তো আর কেউ নেই আপনি
ছাড়া।
-ও হ্যা তাইতো কি বলবেন বলুন।
-আমাকে চিনেন আপনি?
-একেবারেই না।
-তাহলে প্রেমপত্র দেওয়ার সাহস হয়
কিভাবে
আপনার?
-আজিব আমি কেন আপনার মত একটা
ইয়েকে
প্রেমপত্র দিতে যাব।
-এই ছেলে ইয়ে মানে কি হ্যা?
-ইয়ে মানে বদমেজাজি ছাড়া আর কি।
-কি আমি বদমেজাজি।
-তাই তো মনে হচ্ছে গায়ে পড়ে ঝগড়া
করতে
এসেছেন।
-কি আমি ঝগড়া করতে এসেছি,ঝগড়ার কি
দেখছ তুমি
এবার দেখবে।
-মানে?
-তোমার নাম মানিক ?
-হ্যা।আপনি তুমি করে বলছেন কেন?
-তার কৈফিয়ত তোমায় দিব কেন?তাছাড়া
চিঠির শেষে
M অক্ষর লেখা।
-আজিব ব্যাপার M অক্ষরে আর কারও নাম
হয় না নাকি।
-হয় কিন্তু এটা তোমার কাজ আমি জানি।
-এত সহজে বুঝলেন কেমনে আমিই লিখেছি
চিঠিটা।
প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি।
-আজিব।তোমার মত একটা ছ্যাচড়া ক্ষ্যাৎ
ছেলের
প্রেমে পড়ব আমি ভাবলে কি করে। সব সময়
মোটা
ফ্রেমের চশমা পরে থাক আয়নায় দেখেছ
কখনও
নিজেকে।
-আমি আয়না দেখিনা আপনাদের মত, হি
হি হি হি।
-এই আপনাদের মত বলতে কি বুঝাতে চাইছ।
-কিছুনা।আমি আসি এখানে অন্তত ঝগড়া
করার কোন
ইচ্ছে আমার নেই তাও আপনার সাথে।
-এভাবে তো চলে যেতে দিব না।(ওড়না
কোমরে
পেচিয়ে)
-মানে?
-প্রেম পত্র কেন পাঠিয়েছ বল?
-আমি অন্যায় করেছি আমাকে মাফ করে
দেন।
-আমি নোটিশ করব তোমার বাসায়।
-প্লিজ এই কাজটা অন্তত করবেন না।
আমাকে আপনি যা
শাস্তি দিবেন মাথা পেতে নিব কিন্তু
বাসায় জানাবেন না।
(কেঁদে কেঁদে বলল মানিক)
-এত ভয় যখন প্রেম পত্র লিখেছিলে কেন?
-আমি ভুল করেছি।
-এই ভুল দ্বিতীয়বার হবে?
-আর কখনো না।
-ভাল ছেলে।এবার যাও।
-হুম।ধন্যবাদ।
মেয়েটি মুচকি হাসছে, মানিকের
কান্নারত মুখটি দেখে।
একটা ইমোশনাল ছেলে।এভাবে কেউ একটা
মেয়ের কাছে হার মানে।মেয়েটি অল্পেতে
বোকা বানিয়ে দিল।
মানিক নামের এই ছেলেটি ব্যস্ত শহরেরর
কোন
এক এলাকায় থাকে।প্রায় তিন বছর একটা
মেয়েকে
সে দেখে আসছে বিভিন্ন রুপে।কখনও একা
একা
বসে থাকে,কখনও নুপুর পায়ে এদিক থেকে
ওদিকে হাটে,কখনও আকাশ দেখে,কখনও
চুলগুলো ছেড়ে কফির মাগ হাতে বসে
থাকে,কখনও মিষ্টি করে হেসে বিকেলের
পাখিগুলোকে বিদায় জানায়।এক অপরুপ
মায়ায় মানাক
আটকে গেছে।সারাদিনে দেখা বলতে
বিকেলের
যে সময়টুকু।মানিক মেয়েটিকে দেখার জন্য
বিকেলে এই সময়টুকু ঘুড়ি উড়ায়।কিন্তু চোখ
থাকে
মেয়েটির দিকে।পাশাপাশি ফ্লাটে
থাকে তবুও
মেয়েটির নাম জানা হয়নি।
কেমন যেন একটা অদৃশ্য মায়া আছে এই
মেয়েটির
চোখে মুখে।ছাদে ঘুড়ি উড়ানোর সময়
দুজনের
চোখে চোখ পড়লে চোখ সরিয়ে নেয়।
মেয়েটি মাঝে মাঝে মুচকি হাসে।এই
হাসিটাই
মানিক পাগল করে তুলেছে।প্রতিরাত
ে ডায়েরী নিয়ে বসে একটা কবিতা
লিখতে।খুব
ইচ্ছে শেষ বিকেলের এই মেয়েটিকে একটি
কবিতা লিখে দেওয়ার।কিন্তু কবিতা পেটে
আসলেও
মাথায় আসে না।একরকম ভাললাগা থেকে
আজ ভালবাসার
সৃষ্টি।একটু অন্যরকমভাবে মানিক
মেয়েটিকে
জানাতে চায় তার মনের কথা।কিন্তু ভয় হয়
যদি উল্টা
পাল্টা কিছু করে।
এইতো কয়েকদিন আগে,
মানিক ঘুড়ি উড়াচ্ছে সাথে তার ছোট ভাই
ছিল।হঠাৎ ঘুড়িটি
কিভাবে যেন নিচে পড়ে যায়,তাও ঐ
মেয়েটির
ছাদে।তখন ছোট ভাই ঘুড়ি চাইতে গেলে
বিনা
দোষে কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।
তবে মেয়েটিকে দেখে একেবারে নরম মনে
হয়।
অনেক ভেবে চিন্তা করে চার লাইন কবিতা
গতকাল
লিখে কাগজটা ছুড়ে মেরেছিল মেয়েটির
ছাদে।
কাগজে লিখা ছিল,,
.
শেষ বিকেলের মেয়ে,
যদি চাও পাখি হব,
হব গোধুলির আলো,
এই বুকেতে নীড় খুঁজে বাসবে একটু ভালো।।
.
নিচে ছোট্ট করে M লিখা।
কাগজটা ছুড়ে মেরে আড়ালে লুকিয়ে
দেখছিল
মানিক।
কিছুক্ষন পর মেয়েটি এসে কাগজটি খুলে
পড়ল,আশেপাশে তাকিয়ে মুচকি হেসে
আবার নিচে
নেমে গেল।মানিক আর উঠেনি ছাদে তখন।
মনে মনে ভেবেছিল হয়ত মেয়েটিও
ভালবেসে
ফেলেছে তাকে।
কিন্তু,
বিপরীতটাই হল আজ।
মেয়েটি তাহলে একটুও ভালবাসে না।যদি
সত্যি সত্যি
আম্মুকে জানিয়ে দেয় তাহলে আর বাসায়
থাকতে
হবে না।বলে দিতেও পারে যে সাংঘাতিক
মেয়ে।
তবুও একটা কষ্ট জেগে উঠেছে এতদিন
মেয়েটির যে হাসিগুলো মানিককে পাগল
করে
রেখেছে সেগুলো কি মিথ্যে।
আচ্ছা চোখে চশমা পরলে কি ক্ষ্যাত হয়ে
যায়।
মেয়েটি সত্যিই বলেছে হয়ত।
রাতে মন খারাপ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল
মানিক।
এরপর থেকে একটি বিকেলেও মানিক ঘুড়ি
নিয়ে
ছাদে উঠেনি।খুব দেখতে ইচ্ছে করে
মেয়েটিকে,কিন্তু সে তো তাকে পছন্দই
করেনা
তাহলে কেন যাবে সে।
.
এভাবে সাতদিন চলে গেল।মানিক এখন
চুপচাপ থাকে।
বিকেল হলে সেই চঞ্চল মন আর কারো
আশায় পথ
চেয়ে থাকে না।
সকালে মানিক ভার্সিটির উদ্দেশ্যে
বাসা থেকে বের
হয়েছে।পিছন থেকে কেউ একজন বলে
উঠল....
-এই ছেলে শোন?(মেয়েটি)
মানিক পিছনে ফিরে মেয়েটিকে
দেখে,আবার হাঁটা
ধরল।
-কি হল কথা কানে যায় না?(রাগী সুরে)
-মানিক দাড়িয়ে গেল।
-শুনতে পাচ্ছ না তোমাকে ডাকছি।
-আমাকে।কেন?
-প্রয়োজন আছে তাই।
-আমার তো কোন প্রয়োজন নেই।
-চুপ।এত কথা বল কেন?
-আজিব আমার সময় নেই আসি।
-এই ছেলে তোমাকে দাড়াতে বলেছি না।
-আমি আপনার বাধ্য নই।
-হ্যা তুমি আমার বাধ্য।
-দেখেন এবার কিন্তু সত্যিই দেরি হয়ে
যাচ্ছে।
-হোক দেরি।প্রেমপত্র দেওয়ার সময় খেয়াল
ছিলনা এই কথাটা।
-মানে?আমি তো ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।
আবার ঐ
বিষয়গুলো কেন?
-কারন আমার লাগবে।
-কি লাগবে।
-কিছুনা।তুমি বিকেল হলে ছাদে আস না
কেন?
-সেটা আপনাকে বলতে যাব কেন?
-তা বলবে কেন ভীতুর ডিম একটা।
-হুম।আসি।
-এই আসি মানে কোথায় যাবে?
-আমার ক্লাস আছে।
-আজ কোন ক্লাস হবে না। আমাকে নিয়ে
সারাদিন
ঘুরতে হবে।
-আজিব কে হন আপনি আমার?
-আমি তোমার শেষ বিকেলের মেয়ে।
-(মানিক মাথা নিচু করল কথাটি শুনে)
-এত যখন ভয় পাও তাহলে প্রেমে পড়তে
বলেছিল কে আর আমাকেও প্রেমে পড়তে
বাধ্য
করলে কেন?
-মানে?
-মানে এত সুন্দর করে প্রেম প্রস্তাব দিলে
কেন?প্রতিদিন ছাদে যাও আমাকে
দেখতে।
বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাক
কেন?তুমি
জান তোমার চাহনির প্রেমে পড়ে গেছি।
-কি বলছেন এসব(একটু আমতা আমতা করে)
-হ্যা বুদ্ধু আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।
ভেবেছিলাম সেদিনই আমাকে জড়িয়ে ধরে
বলবে
ভালবাসি।কিন্তু ভীতুর মত পালিয়ে গেলে।
আর
আমাকে একদিন অনেক কষ্ট দিলে।
-আমি আবার কখন আপনাকে কষ্ট দিলাম?
-কষ্ট দাওনি তবে একদিন কেন আসনি
তোমার
শেষবিকেলের মেয়ের কাছে।তুমি জান না
তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারি
না।প্রতিদিন
অপেক্ষায় থাকি কখন বিকেল হবে,কখন তুমি
ঘুড়ি
নিয়ে ছাদে আসবে,তোমার চোখে চোখ
পড়বে।কেন দিলে এত কষ্ট।
-তুমিই তো বললে আমি দেখতে পঁচা।(কেঁদে
কেঁদে আপনি থেকে তুমি হয়ে গেল)
-আমি বললাম তুমি বিশ্বাস করবে।তুমি এত
বোকা
কেন?সত্যি তুমি অনেক কিউট।
-তাহলে সেদিন বলেছিলে কেন?
-আমি তো মজা করেছিলাম।
-মজা না।(মেয়েটিকেহাত ধরে টেনে বুকে
জড়িয়ে নিল)
-এই ছাড় ছাড় কেউ দেখলে কি ভাববে।
-কেদোখে দেখুক কিছু ভাববেনা
শেষবিকেলের মেয়ে।
-আমার কিন্তু একটা নাম আছে।
-তাই..
-হুম।ইস্পিতা।
-না ইস্পিতা না তুমি আমার শেষ
বিকেলের মেয়ে।
-হতে পারি যদি কথা দাও?
-কি কথা দিতে হবে?
-সারাজীবন আমাকে আগলে রাখতে হবে।
-হুম।
-তাহরে এবার প্রপোজ কর আগের বার
যেমনভাবে করেছিলে।
-ওভাবে পারব না।
-তাহলে তোমার আম্মু মানে শাশুড়ি
আম্মাকে বলে
দিব।
-যাও বলে দাও ভয় পাই নাকি।
-সত্যি সত্যি কিন্তু।
-হুম।আর বলো তুমি বউমা হচ্ছ উনার।
-ধ্যাত দুষ্টু।বলনা গো দুই লাইন কবিতায়
ভালবাসি।
-একটা স্বপ্ন দিবে আমায়,যা অনন্তকাল
বাচতে
শিখায়,একটা আশা দিবে আমায়,যা
অপেক্ষার প্রহরে
নিঃস্বার্থ প্রেম চায়,একটু ভালবাসবে
আমায়,যা
তোমাকে ভাবতে শেখায়।হবে কি আমার
শেষ
বিকেলের মেয়েটি?
-হুম হব তো।হাতটি ধর।
-হুম।
-চলো।
-কোথায়?
-বাহ বলেছিলাম না সারাদিন ঘুরতে হবে
আমায় নিয়ে।
-আমি পারব না।
-কি বললে তুমি?
-না কিছুনা চলো।
-এই শুনো।
-কি?
-প্রেম হল তাতে কি তুমি কিন্তু রোজ
বিকেলে
ছাদে আসবে ঘুড়ি নিয়ে।
-কেন?
-আমি বলছি তাই।
-হুম।যদি না আসি।
-তাহলে ব্রেক-আপ।(হি হি হি)
-তাহলে তো আসতে হবে।
-হুম।
-পাগলী।
-হুম শুধু তোমারই।।।
Share:

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

ব্লগ সংরক্ষাণাগার